KiHobe Latest Questions

Ashit Sharkar
  • 0

কি হবে কানাডিয়ান জামাই দিয়ে ?

  • 0
কি হবে কানাডিয়ান জামাই দিয়ে ?

Leave an answer

You must login to add an answer.

1 Answer

  1. কানাডিয়ান জামাই………!

    ঋতু এবং অপূর্ব একই ইউনিভার্সিটি তে পড়ে। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি।ঋতু হচ্ছে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, আর অন্যদিকে অপূর্ব হচ্ছে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ঋতু এবং অপূর্ব তারা এসএসসি পাস করার পর পর থেকেই একে অন্যকে পছন্দ করে এবং তাদের ভালোবাসা আজ প্রায়  ৬-৭ বছর  হতে গেছে।তারা একে অন্যকে অনেকটাই ভালোবাসত তবে বাস্তবতার কাছে তাদের ভালোবাসা একদিন হেরে যায়। আর ভালোবাসা হারার মূল কারণ হচ্ছে সেই কানাডিয়ান জামাই সাথে ঋতুর লোভ।

    সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। দেখতে দেখতে ইউনিভার্সিটির লাইফটাও শেষ হয়ে গেল। ঋতুর পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে এমনকি তারা পাত্র খোঁজা শুরু করে দিয়েছে। অন্যদিকে অপূর্ব মাত্র ইউনিভার্সিটির পড়ালেখা শেষ করলো। এখনো মাস্টার্স করা বাকি বা একটা চাকরি ম্যানেজ করা হয়নি এখন পর্যন্ত। এই অবস্থায় এসে ঋতুর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দিবে যেটা কিনা তার জন্য আকাশকুসুম কল্পনার মতোই। এরমধ্যে অপূর্ব তার পরিবারে জানানোর জন্য যে যোগ্যতা অর্জন করা দরকার সেটাও সে করতে পারেনি। কিন্তু সে ঋতুকে  অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসতো।একবার সে চিন্তা করল যে ঋতুকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। বা কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলবে। কিন্তু ঋতু রাজি হলো না।

    অলরেডি ঋতুর পরিবার থেকে কয়েকটি ছেলে দেখা হয়ে গিয়েছে। ঋতু দেখতে অনেক সুন্দর ছিল সেজন্য অনেক ভালো ভালো পরিবার থেকে আলাপ এসেছে। এর মধ্যে একটি ছেলে ছিল কানাডিয়ান প্রবাসী। কানাডিয়ান প্রবাসী বলে ঋতুর পরিবারের অনেকেই সেই ছেলেকে পছন্দ করলেন। ঋতুর  ও মোটামুটি ছেলেটাকে ভালো লাগলো। ঋতুর পরিবারের সবাই ঋতুর মত জানতে চাইলে ঋতু আর না করল না। সে রাজি হয়ে গেল। এমন কানাডিয়ান ছেলেকে কে মিস করে?

    অন্যদিকে অপূর্ব সেই ঘটনা জেনে সেই বিয়ে ভাঙ্গার জন্য রিতুকে অনেক বেশি রিকুয়েস্ট করলো। কিন্তু ঋতু কোনোভাবেই সে তার মতামত থেকে সরে আসতে পারছে না। সে বিভিন্ন ধরনের অজুহাত দেখাতে লাগলো। যেসব অজুহাতের কোন ভিত্তি ছিল না। অপূর্ব ঋতুর সেই অজুহাত গুলো দেখে সেও বুঝতে পারল। আজ অপূর্ব বেকার বলে, ভালো চাকরি নাই বলে, ইউরোপের ভিসা বা কানাডিয়ান না বলে অপূর্ব সে তার ভালোবাসাকে হারালো। অপূর্ব ঋতুকে  অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু ঋতু বিভিন্ন অজুহাতে দেখাতেই  থাকলো। শেষমেষ অপূর্ব ঋতুকে বুঝাতে ব্যর্থ।

    কিছুদিনের মধ্যেই রিতুর বিয়ে হয়ে গেল সেই কানাডিয়ান ছেলের সাথে।রিতু মনে মনে অনেক খুশি হল এবং  কানাডিয়ান জামাই পেয়ে  সে মনে মনে অনেক বেশি আনন্দিত। ফাস্ট ওয়াল্ড এর একজন মানুষের সাথে তার বিয়ে হয়েছে মানে সেও ফাস্ট ওয়াল্ড এর একজন বাসিন্দা হয়ে যাবে। যেটা কিনা ঋতুর ভাবতেও তার অনেক বেশি ভালো লাগছিল। সবকিছুই যেন তার স্বপ্নের মতই চলছে।

    সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বিয়ের সময় কানাডিয়ান জামাই পেয়ে/ তার ভালবাসার অতীত কাহিনী কিংবা বিভিন্ন ঘটনাসমূহ কিভাবেই যেন খুব সহজেই ভুলে যেতে লাগল।

    প্রায় বছর খানেক পর,অপূর্বের ও  বিষয়টা আস্তে আস্তে হালকা হতে থাকলো। সেও তার মন থেকে ঋতুকে কিছুটা মুছে ফেলেছে। অনেকদিন আগে স্কলারশিপের জন্য  সে কানাডাতে এপ্লাই করে রেখেছিল। দু’বছর মাস্টার্স এর জন্য। যথারীতি সে কানাডাতে চলে যায় এবং মাস্টার্স কমপ্লিট করে  দু’বছর পর।মাস্টার্স শেষ করার সাথে সাথেই সে খুব ভালো একটি চাকরিও পেয়ে যায় কানাডাতে। এবং সে পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য এপ্লাই করে। এবং সেটাও তার হয়ে যায়। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। স্বপ্নের মত সে যা চাচ্ছে তার চেয়েও বেশি কিছু পেয়ে যাচ্ছে সে। তবে পাওয়ার পিছনে ছিল তার সততা এবং কঠোর পরিশ্রম। খুব ভাল একটা পজিশন এ অপূর্ব কানাডাতে।

    হঠাৎ একদিন অপূর্ব একটি সুপার শপে বাজার করতে গেল  এবং দেখতে পেল ঋতু সেই সুপারশপের দারোয়ানের চাকরি করছে। অন্যদিকে ঋতুর,  হাজবেন্ড সেই সুপারশপের সেলসম্যান। ঋতু রীতিমতো  অপূর্ব কে  দেখে থমকে গেল অপূর্ব এখানে কিভাবে। ঋতুর সাথে অপূর্বের দেখা হলো এবং তারা কথা বললো। পরবর্তীতে ঋতু অপূর্বকে তার হাজবেন্ডের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল তার কলেজ ফ্রেন্ড বলে। অপূর্ব ঋতু এবং তার হাজবেন্ডকে ডিনারের দাওয়াত দিল একটি ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট। তখন সেই ডিনারে অপূর্ব তার সাথে ঘটে যাওয়া বিগত তিন  চার  বছরের কাহিনী সব কিছু বর্ণনা করলো, কিভাবে কানাডাতে আসা, স্কলারশিপ পাওয়া, ইত্যাদি। এবং সে সফলও হয়েছে।খুব ভালো একটা অবস্থায় আছে অপূর্ব।

    অন্যদিকে ঋতু এবং তার হাজবেন্ড খুব একটা  ভালো অবস্থায় নেই। অনেকটা স্ট্রাগলিং লাইফ বলা চলে, অনেক পরিশ্রম করতে হয় তাদের। শুরুতে সে যেরকম কানাডিয়ান জামাই বা কানাডার বিভিন্ন রঙিন  স্বপ্ন দেখেছিল বাস্তবে তার ঠিক উল্টো। যে কানাডা কিংবা কানাডিয়ান জামাইয়ের জন্য তার পুরনো ভালোবাসাকে ভুলে যেতেও দুবার ভাবেনি সেই পুরনো ভালোবাসা আজ কানাডার বুকে প্রতিষ্ঠিত।