চাঁদ ঘাটের মাঝির প্রেমের শেষ পরিনতি কি ছিল ? -পর্ব ২
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
[…] পর্ব ২ পড়ুন […]
ওই দিন ছিল চাঁদনী রাত। চাঁদের আলোয় স্পষ্ট যেন সবকিছু দেখা যাচ্ছে। চাঁদনী ঘাটের চাঁদের
পর্ব – ২
আলো, যেন ওই ঘাটের সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলল। ঘাটে বকুলের নৌকো বাঁধা,নৌকাটা মোটামুটি অনেকটাই বড় ছিল এবং নৌকোতে সম্প্রতি বকুল ঘুমটিও লাগিয়েছিল,যাতে রোদ বৃষ্টি থেকে যেন রক্ষা পাওয়া যায়। বকুল আসার সময় তাড়াহুড়ো করে ঘরের দরকারি কিছু জিনিস, খাবার এবং টাকাপয়সা কাপড়-চোপড় হাতে করে যা যা নিয়ে আসা যায় সে নিয়ে চলে আসলো এবং অতিরিক্ত দুইটা বৈটা ও নিয়ে আসলো।কেননা সে জানে তাকে এই বাড়ি থেকে সারা জীবনের জন্য চলে যেতে হচ্ছে, তাই ভবিষ্যতে কাজে লাগবে এমন কিছু জিনিসপত্রও নিয়ে গেল। নদীর ঘাটে এসে তারা আর দেরি করলো না,নদী পার হয়ে সড়কপথের রওয়ানা না দিয়ে তারা নদীই পথেই যাত্রা শুরু করলো।হাতে সময় খুব কম,রাত শেষ করে ভোর হওয়ার আগেই তাদেরকে অনেকটা দূর চলে যেতে হবে। বকুল এবং বকুলের ছোটভাই তারা দুইজন মিলে অবিরাম দাঁড় বেয়ে নৌকা চালিয়ে যেতে লাগলো, ঝুমুর আরো একটা বৈটা নিয়ে তাদের সাথে দাড় বাওয়া শুরু করল। তিনজন তারা বিরতিহীনভাবে দার টেনেই চলল এবং নৌকাও দ্রুত সামনের দিকে যেতে লাগল।নির্জন রাতে, একাকী একটা নৌকার মধ্যে তিনজন মানুষ তাদের মধ্যে যেন কোন ভয়ই কাজ করল না।একটাই ভয় যদি ঝুমুরের বাবার কাছে ধরা খায় তাহলে সবকিছুই শেষ।পৃথিবীতে তারা কেউই সুখী হতে পারবে না এমনকি তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও কম।তাই বাঁচতে হলে যত দ্রুত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদেরকে ঝুমুরের বাবার নাগালের বাইরে চলে যেতে হবে। রাত শেষ হয়ে ভোরের ফজরের আজান, এরই মধ্যে তারা অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে ফেলেছে। নৌকাকে একটা পাশে সাইড করে তারা কিছুক্ষণ বিশ্রামও নিয়ে নিল।ভোর শেষে সোনালী সকাল, এরই মধ্যে ঝুমুরের বাড়িতে ঝুমুর পালিয়ে গেছে সেটা জানাজানি হয়ে গেল। সবাই ঝুমুর কে খুঁজছে, কিন্তু কোথাও পাচ্ছে না।
বকুল, ঝুমুর এবং বকুলের ছোটভাই তারা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর আবারো মাঝ নদীতে চলে আসলো এবং দাড় বেয়ে সামনে এগুতে লাগল।নদীর পাড়ে যদি তাদের যদি কেউ দেখে ফেলে তাহলে হয়তো চিনেও ফেলতে পারে এই ভেবে তারা নদীর পাড়ে না উঠে তারা চলতেই লাগলো।একবার বকুল অন্যবার তার ছোট ভাই, এভাবে জিরিয়ে জিরিয়ে দাঁড় বেয়েই চললো।কেননা ধরা খেলে তাদের আর রক্ষা নেই জীবনটাই চলে যাবে। তারা ওই দিনও সারাদিন দাড় বেয়ে আরো অনেকটা পথ অতিক্রম করে ফেলল। বাড়ি থেকে আনা শুকনো খাবার ও অন্যান্য খবর দিয়ে তাদের ওই দিনটাও চলে গেল।এভাবে তারা নদী পথে যাওয়ার সময় বিভিন্ন বাজার থেকে খাবার দাবার কিনত।এভাবেই তিন-চারদিন পর নৌকা চালাতে চালাতে তারা ঝুমুরের বাবার ধরাছোঁয়ার বাইরে, অনেক দূরে এখন।অনেকটাই বিপদমুক্ত তারা।চার,পাচ দিন পর তারা যেতে-যেতে অচিন্ত্যপুর নামের একটি গ্রামের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, গ্রামটাই ভালো লেগে গেল তাদের।সেই গ্রামের একটি বড় গঞ্জ অনেকটাই শহরের মত। তারা সেখানে নামল এবং ঘোরাঘুরি করল,তখন তাদের অনেকটাই ভালো লেগে গেল এলাকাটা।
নৌকাতে প্রায় ৪-৫ দিন থাকার পর,যখন তারা ভূমিতে আসলো মনে হচ্ছিল তারা যেন পৃথিবীতে ফিরে এসেছে নতুন এক প্রাণ নিয়ে। এ যেন তাদের এক নতুন জীবন পাওয়া।কিন্তু তাদের থাকার জন্য ত একটি ঘর চাই। বকুল গঞ্জে ঘুরোঘুরি করে বিভিন্ন জায়গায় ভাড়ায় কোন বাসস্থান পাওয়া যায় কিনা সেটি খুঁজে দেখল এবং ভাগ্যবশত একটি পেয়েও গেল। তারা দুই রুমের ছোট্ট একটি টিনের ঘর ভাড়া পেল। ওই গঞ্জে আরো বিভিন্ন মানুষ ভাড়ায় থাকত কেননা এটি ছিল একটি ব্যবসায়িক এলাকা।এখানে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করত।বকুল তাদের নতুন বাসস্থানে ওটার দিন একজন কাজী ডেকে তাদের বিবাহ সম্পন্ন করল।বকুল এবং ঝুমুর এখন স্বামী-স্ত্রী, তাদের নতুন জীবন শুরু।
বকুল প্রথম প্রথম তার নৌকো দিয়ে বিভিন্ন পণ্য পার্শ্ববর্তী বাজার, এলাকায় পরিবহনের জন্য কাজ শুরু করে।অভাবের সংসার, বকুল এবং ঝুমুর কোনরকম দিন পার করতে থাকে। ঝুমুর বকুলকে মানসিকভাবে প্রচুর হেল্প করে। প্রথম অবস্থায় বকুলের সাথে তার ছোট ভাইয়ের কাছে যেত। বকুলের ছোট ভাই মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠেছিল, পড়ালেখায় খুবই ভালো ছিল সে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ সে পড়ালেখা ছেড়ে বড় ভাইয়ের সাথে কাজে।কিন্তু কিছুদিন পর বকুলের আয়-রোজগার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।তার নৌকায় সার্ভিস ভালো দেওয়ার কারণে তার অনেক কাস্টমার।সেও দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে আসছে। সৎ এবং নিষ্ঠার সাথে তার ব্যবসা চালিয়ে যেতে থাকে।কিছুদিন পর টাকা জমিয়ে সে আরো ও একটি ইঞ্জিনের নৌকা কেনে ফেলে। সংসারের অবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো। বকুলের ছোট ভাই কে ও আর কাজ করতে হয় না সেও আবার তার পড়ালেখা শুরু করে ফেলল।এভাবে বকুলের আয় রোজগার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকল এবং সে পরবর্তীতে আরো ৩ টি নৌকা তারপর আরো কিছু দিন পর বড় কার্গোও কিনে ফেলল।দক্ষতা এবং সততার সাথে তার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকলো সে।