KiHobe Latest Questions

Tanni Noor
  • 0

অপুর বিদেশিনী বউ

  • 0

Leave an answer

You must login to add an answer.

1 Answer

  1. ইউক্রেনের উওরে ছোট শহর নিজিন, মধ্যবিও পরিবারে বেড়ে উঠা এলিজাবেথ থামাসকার। স্থানীয় কিছু পরিবারের মতোই তাদের জীবনে ও ছিল সুখ,দুংখ,হাসি ,কান্না। বাবা আলাদা হয়ে যাওয়ার পর মায়ের কাছেই বড় হয়ে উঠতে থাকে এলিজাবেথ।

    ছোট দোকানের উপার্জনের মাধ্যমে শেষ করে গ্রাজুয়েশন, তারপর নিজের হাতে তুলে নেয় মায়ের ব‍্যাবসা। সংগ্রামের মধ্যে বেড়ে উঠা ছেলে মেয়েরা যেমন বাস্তবতায় বেড়ে উঠে, এলিজাবেথ তার ব‍্যতিক্রম ছিল না। তখন তার বয়স ২০ বা ২১, ইউক্রেনের রাজনৈতিক পালাবদল শুরু হলে তার মা জীবনের তাগিদে পাড়ি জমান পোল‍্যান্ড।

    তাগিদ এলো এলিজাবেথ এর জীবন একাই চালাতে হবে। মে মাসের কোন এক সকালে জার্মানির জেলাসন শহরে একমাত্র বাঙালি উদ্দোক্তা তাজুলের খামারে স্ট্রবেরি খেত থেকে স্ট্রবেরি তোলা হচ্ছে। কাজ করছে কিছু তরুণী যারা ইউক্রেন থেকে আসা, তাদের মধ্যে এলিজাবেথ ও আছে।

    সেখানে কিছু বাঙালি তরুণ ও আছে, যারা জীবনের তাগিদে পাড়ি জমিয়েছে ইউরোপে।কাজের সুবাদে কথা বলতে গিয়ে টুকটাক বাংলাও শিখে ফেলে সে।

    তাজুলের খামারে যে বাঙালি তরুণ কাজ করছে তাদের জীবন বরই কঠিন। দু‍ঃসহ সংগ্রামের পথ পেরিয়ে জার্মান পৌঁছনো তরুণরাই কাজ করে তার খামারে ।এদের মধ্যে একজন অপু,স্বভাবে,চিন্তায়, কাজে ব‍্যতিক্রমী একজন তরুণ।এলিজাবেথ ও অপু এক সাথে কাজ করার সুবাদে ভালো লেগে যায় দুজন দুজনের।

    দুজনের স্বপ্ন জার্মানিতে শুরু করবে নতুন জীবন।কিন্তু এই সুখটা হয়তো তাদের ভাগ্যে ছিলনা,তাইতো একটা কালো মেঘ এসে হানা দেয় তাদের স্বপ্নে।এখান থেকে তাদের জীবনে যে গল্পের শুরু তা সিনেমার গল্পকে ও হার মানাবে।

    হঠাৎ করে অপু অসুস্থ হতে থাকে। হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় অপুকে, ধরা প‍রলো অপুর ব্রেন টিউমার।ডাক্তার জানিয়ে দিলো অল্প কিছুদিন পৃথিবীতে বেচে থাকবে সে, বিষয়টি জেনে যায় এলিজাবেথ। নিমিষেই বদলে গেল তাদের সব ভাবনা।

    এলিজাবেথ নিজেকে সামলে নিয়ে বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিলো,একদম ভেঙে পড়লো না সে। অপুকে ভালোবেসে নিজের নামকে বদলে লিজা হয়ে যাওয়া মেয়েটির এখন চিন্তায়, ভাবনায় অপুর সেবা করা। যে মানুষ আর কয়েকটি দিন বেচেঁ থাকবে এই পৃথিবীতে সেটা জেনে ও লিজা অপুকে বিয়ে করার কথা বললো অপুকে।

    লিজার জোরাজুরিতে তাজুল ইসলামী শরীয়াহ মেনে বিয়ে করিয়ে দেয়া হয় ছোট একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। জার্মানির শহরে একটি ভাড়া বাসায় নতুন জীবনের সূচনা করে লিজা, নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে কিছুটা ভালো রাখার। অপুকে একটু ভালো রাখার জন্য লিজা তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায় তারা। এর মাঝে বাংলাদেশেও আসা হয় তাদের, বিদেশি একটা মেয়ে বাংলার মাটিতে এসে নিজেকে তৈরি করে বাঙালি হিসেবে।

    মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া অপু হয়ে উঠে প্রবল ধার্মিক, অপুর ইসলামের প্রতি ভালোবাসা দেখে ইসলামের সান্নিধ্যে চলে আসতে থাকে লিজা। শিখতে শুরু করে বাংলার সাথে সাথে কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ পড়া।লিজার সেবার জন্যে ডাক্তার এর বেধে দেয়া সময়ের চেয়ে কিছুদিন বেশি বেচেঁ থাকে অপু।তারপরও ছেড়ে যেতে হয় পৃথিবীর মায়া ছেড়ে।

    অপুর মৃত্যুর পর লিজা চাইলে বেচেঁ নিতে পারতো ইউরোপের রঙিন জীবন,কিন্তু সেটা না করে সে চলে আসে বাংলাদেশে।অপুর পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঙালি বউদের মতো চলতে থাকে সে,আরো বেশি করে আকড়ে ধরে অপুর দেশ,ভাষা,ধর্ম,সংস্কৃতিকে।

    ইসলাম হয়ে উঠে লিজার জীবনের এক অসাধারণ বিধান।অপুর প্রিয় গ্রামের আকা বাকা মেঠো পথটি ও লিজার প্রিয় হয়ে উঠে।অপুর মায়ের কাছে লিজা যেন তার কলিজার ছেলে অপু,লিজার ভেতরে খুজে পান অপুকে।

    গ্রামের মানুষ লিজাকে যতোই দেখে ততোই যেন বিস্মিত হয়ে উঠেন লিজার বাঙালি চালচলনে।একজন বিদেশিনী হয়েও বাঙালি ছেলেকে ভালোবেসে বাঙালির সংস্কৃতিতে নিজেকে আকড়ে ধরে বেচে থাকা লিজা যেন ভালোবাসার জলন্ত এক উদাহরণ।বাড়ির আঙিনায় শুয়ে আছে অপু, তারই স্বৃতি নিয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দেওয়াই এখন লিজার একমাত্র উদ্দেশ্য। এমন ভালোবাসা সত্যিই বিরল।