চাঁদ ঘাটের মাঝির প্রেমের শেষ পরিনতি কি ছিল ? -পর্ব ৩
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
চাঁদ ঘাটের মাঝি, পর্ব – ৩
এরই মধ্যে তাদের ঘর আলো করে তাদের ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিল।সুখ-শান্তি,প্রাপ্তি আর সীমাহীন ব্যস্ততায় দিন কাটছে তাদের।
.
.
.
.
.
.
১০ বছর পর
.
.
.
যে বকুলকে ঝুমুরের বাবা ঘৃণা করত, সে একজন মাঝি, গরিব, আর এতিম ছেলে বলে।যার পরিচয় সে একজন গরীব।এমন কি যাকে খুন ও করতে চেয়েছিল আজ সেই বকুল চল্লিশটা জাহাজ, বিশটা লঞ্চ,পঞ্চাশটা কারগো এর মালিক।এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক ছোট-বড় ব্যবসা!আজ তার কোটি কোটি টাকা।অন্যদিকে ছোট ভাইও এমবিবিএস ডাক্তার।জীবনে যেন সবই পেয়েছে বকুল। আসলে যদি ইচ্ছা শক্তি থাকে আর ভাগ্য যদি সহায় হয় তাহলে জীবনের টা যে, কিভাবে পাল্টে যায় তা কেউ বলতে পারে না।
অনেক দিন পর বকুল এবং ঝুমুর আবার চিন্তা করে যে তাদের সেই স্মৃতি বিজড়িত গ্রামে যাবে।যেখানে কেটেছে তাদের কৈশোর, শৈশব আর জীবনের সোনালী দিনগুলো।মাঝে অবশ্য তারা অনেকবার যেতে চেয়েছিল কিন্তু সময় সুযোগ আর পরিস্থিতির কারণে আর যাওয়া হয় নি। কেননা ঝুমুরের বাবা খুবই রাগী ছিলেন,এমনকি বকুল কে ত একবার খুন করার প্লেন ও করে ফেলেছিলেন।
অনেকদিন যাবত আবার তাদের দুজনেরই গ্রামে যাওয়ার জন্য মনটা খুব ছটফট করছিল এবং তারা শেষে সিদ্ধান্ত নিলো যাই হোক না কেন যে তারা গ্রামে বেড়াতে যাবে।বকুল, ঝুমুর এবং তাদের কন্যা তারা গ্রামে রওয়ানা দিল। প্রায় দশ বছর পর।
ঝুমুরের কলেজের পাশে যে গঞ্জ সেই গঞ্জে ছিল নদীর ঘাট, নদী পাড় হয়ে ওপারই হচ্ছে চাঁদ ঘাট।আসার পথে ঝুমুরের সেই কলেজ, বাজার, সব দেখে যেন তার অতীতের সেই কৈশোর কথা মনে পড়ে গেল। যখন তারা সেই নদী পার হচ্ছিল তখন মনে পড়ে গেল নদীর মাঝে ঝুমুর বকুল কে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল,ঝুমুর বকুলের সাথে কত পাগলামিটাই না করেছিল তখন,আর পাগলামিটা না করলেই আজকে তাদের এই অবস্তা হতো না হয়তো।
বকুল ও সবকিছু যেন প্রানভরে দেখছে।অতীতের দিন, বিভিন্ন ঘটনা এবং বিভিন্ন কাহিনী তার মনে পরতে লাগলো তার। যেই নদীতে মাঝি গিরি করত বকুল,আর যে ঘাট দিয়ে অনেক পেসেঞ্জার পারাপার করত আজ সে সেই ঘাটের ই পেসেঞ্জার। নৌকা পার হয়েই নামলো তারা চাঁদঘাটে।কয়েক প্রজন্ম যে ঘাট আঁকড়ে ধরে রয়েছিল বকুলের পূর্বপুরুষরা আজ সেই ঘাট অন্য কেউ ব্যবহার করছে,কিচ্ছু নেই আগের মত। আগে যেখানে বকুল দাড় বেয়ে নৌকা চালাত আজ সেখানে ইঞ্জিন নৌকা।ঘাটের নামার পর বকুলের তার সেই প্রানের চাঁদঘাট দেখে যেন তার মন জুড়িয়ে গেল।এভাবে তারা ঘাট থেকে নেমে গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেটে বাড়ির দিকে রওয়ানা দিল।
ঝুমুর মনে মনে ভাবতে লাগল যে তার বাবা হয়তো এত দিন পর আর রাগ পুশে রাখবেন না।সব ভুলে যাবেন তার মেয়েকে দেখে।তার মা ও খুব খুশি হবে তার নাতনি কে দেখে।এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির দিকে হেটেই রাওয়ানা দিল তারা।যাবার সময় ত বিভিন্ন যায়গা দেখে যেন চেনার উপায় ই নাই।তারা আর কোথাও না গিয়ে তারা আগে ঝুমুরের বাড়ির দিকেই গেল।পথে তারা অনেক কেই চিনতে পারল না।সব যেন নতুন মুখ লাগছে অনেক দিন পর তাই মনে হয়।
আবার অনেক কেই তারা চিনতে পারল কিন্তু বকুল আর ঝুমুরের পোষাক আষাক দেখে তাদেরকে কেউই চিনতেই পারল না।তারা ও দেরি না করে করো সাথে কথা না বলে সোজা ঝুমুরের বাড়িতেই গেল……..!
বাড়িতে যাওয়ার পর ঝুমুর তার বাবা এবং মা কে ডাকলো।কিন্তু ঘর থেকে কেউ বেরিয়ে আসলেন না কিছুক্ষণ পর তার দূর সম্পর্কের এক চাচী বের হয়ে আসলেন। বললেন যে ঝুমুর যখন পালিয়ে যায়, তার বাবা তাকে অনেক খুঁজেছেন।দেরিতে হলেও তিনি তার ভুল বুঝতে পেরেছিলেন এবং মেয়ে আসবে এই ভেবে তিনি পথ চেয়ে থাকতেন।
গত পাঁচ বছর আগে তার বাবা মারা যায় এবং তার মা ও বছর দুয়েক হয় মারা যান।মৃত্যুর আগে তিনি তার মেয়েকে একটি বারের জন্য দেখতে চেয়েছিলেন। কান্না করতে করতে ঝুমুরের মায়ের চোখে পচন ধরেছিল।ঝুমুর সব শুনে হাউ মাউ করে কান্না করতে লাগল।মা বাবার একমাত্র কন্যা ছিল ঝুমুর। ঝুমুরের মা ঝুমুর কে অনেক অনেক ভালোবাসতেন।
বকুল ঝুমুরকে বোঝাতে চাইল আর শান্তনা দিতে লাগল।তার পর তারা ফ্রেশ হয়ে বকুল এর ভিটে বাড়ি দেখতে গেল।যাওয়ার পথে অনেকের সাথে দেখা, বকুলের অনেক বন্ধুর আর পরিচিত দের সাথে ও দেখা হয়ে গেল। কেউ চিন্তেই পারল না তাকে।অবাক হয়ে গেল বকুলের কথা শুনে।
বকুলের ভিটে বাড়িতে কিচ্ছু নেই,সব কিছু যেন মাঠির সাথে মিশে গেছে।আর যা ছিল মানুষ চুরি করে নিয়ে গেছে হয়ত! দেখার মত কিছুই নাই, সারা বাড়ি যেন জংগল।তার পর ঝুমুরও তার পরিচিত কয়েকটা বান্দবির সাথে দেখা করতে চাইল কিন্তু কিছুই নাই আগের মত,সবার বিয়ে হয়ে গেছে।এই দশ বছর এ গ্রামের মানুষ, মানুষ এর জীবনযাত্রা সব কিছু অনেক পাল্টে গেছে।পাল্টে গেছে চাঁদ ঘাটের মাঝি বকুল।তবে আধুনিকতার ছোয়া লাগলেও আজও রয়ে গেছে সেই চাঁদ ঘাট……….!!!